কবির কোনও কল্পনা শক্তি নেই’ : কবি মাহফুজুর রহমান লিংকন এর সাক্ষাৎকার
[ মাহফুজুর রহমান লিংকন। কবি ও প্রাবন্ধিক। জন্ম: ১৭ মার্চ, ১৯৮০ এ বাংলােদেশর কুড়িগ্রাম জেলায়। প্রকাশিত কবিতার বই: ‘অমীমাংসিত ফুলের দেবতা’। বিন্দু, জঙশন, ওয়াকিং ডিসট্যান্স সহ অপরাপর লিটলম্যাগে নিয়মিত লিখছেন।
কবির সাক্ষাৎকার নেবার উদ্দেশ্যে আমরা তাঁকে ই-মেইলে একগুচ্ছ প্রশ্ন পাঠিয়েছিলাম। ১৭ মে ২০২০ তারিখে তিনি যে উত্তরমালা পাঠিয়েছে, তা হুবহু প্রকাশ করা হলো। আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। -সম্পাদক। ]
সা ক্ষা ৎ কা র
❑❑
প্রশ্ন
আপনি জীবনে কী হতে চাইতেন? কবি/লেখক?
মাহফুজুর রহমান লিংকন
যখন থেকে বুঝতে শিখেছি ‘বিশুদ্ধ মানুষ’ হতে চেয়েছি!
প্রশ্ন
জন্ম-মৃত্যুর মাঝখানের জীবন সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কী?
মাহফুজুর রহমান লিংকন
বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড় ম্যাজিক... ! এই ম্যাজিক্যাল সময়টাতে অনেকে অভিভূত
হয়ে ম্যাজিক দ্যাখে... আবার অনেকে অভিভূত হয়ে থাকার ভান করে!
প্রশ্ন
লেখার ক্ষেত্রে আপনার কোনও প্রেরণার জায়গা আছে কি?
মাহফুজুর রহমান লিংকন
হুম! প্রথমত, প্রকৃতির রূপে সাজানো-গোছানো, নদীময়, ছোট্ট কুড়িগ্রাম শহরটা
আমাকে কবিতার মানুষ করে তুলেছে। তবে ২০১২ সালের দিকে এসে বিন্দুর সম্পাদক
কবি সাম্য রাইয়ান আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে… পরবর্তীতে কবি রাশেদুন্নবী সবুজও
প্রেরণা জুগিয়েছে…
প্রশ্ন
বর্তমানে বাংলা সাহিত্যের আলোচনা-সমালোচনা চর্চা কতটা গঠনমূলক হচ্ছে?
মাহফুজুর রহমান লিংকন
বিষয়টা একটু জটিল, গঠনমূলক আলোচনা বলতে আসলে কী বোঝায় সেটা আগে নির্ধারণ
করা দরকার। তবে এ বিষয়ে আমার মতামত পিঠ চুলকানো কিংবা থাপড়ানো কোনটার দিকে
খেয়াল না করে, আপনার সৃষ্টিশীলতাকে আপনি কীভাবে, কতটুকু বিকশিত করতে পারলেন
সেই দিকে মনোনিবেশ করুন- আপনার মঙ্গল নিশ্চিত!!!...
প্রশ্ন
‘কবিতায় ছন্দ’ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?
মাহফুজুর রহমান লিংকন
আচ্ছা বলো তো, কবিতা কি ছন্দ ছাড়া হয়? প্রতিটি কবিতায় ছন্দ অনিবার্য। তবে,
একথা স্বীকার করতেই হবে- আমাদের অগ্রজরা যেমন অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত,
ছন্দবৃত্তে লিখতেন, সমসাময়িক কবিরা সেই ছন্দের তালে না গিয়ে বরং পঠনছন্দ,
শ্বাসছন্দে লিখছেন। মজার বিষয় এই যে, আমাদের পাঠকরা এই ছন্দগুলো সম্পর্কে
জানেন না, কিংবা বলা যায় এই ছন্দে অভ্যস্ত না থাকায় এই ছন্দকে গ্রহণযোগ্য
মনে করছেন না, এতটুকুই শুধু। ছন্দের জাদু না থাকলে কী করে কবিতার শরীর গড়ে
উঠবে!
প্রশ্ন
ছোটবেলায় কি লেখালিখি করতেন?
মাহফুজুর রহমান লিংকন
আমি ইনিয়ে বিনিয়ে, বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলতে পারি না। অনেকবার এ প্রশ্নের
উত্তর দিয়েছি, আবারও দিচ্ছি। আসলে আমি নিজেও জানি না লেখালেখি কবে থেকে
শুরু করেছি, তবে বুঝতে পেরেছি যখন আমি সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।
প্রশ্ন
লিখতে কেমন লাগে?
মাহফুজুর রহমান লিংকন
আমি বেঁচে উঠি লেখার ভিতর দিয়ে।
প্রশ্ন
আপনি কী ধরনের বই পড়তে পছন্দ করেন?
মাহফুজুর রহমান লিংকন
সাহিত্যের ইতিহাস পাঠের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। তবে সব ধরণের বই পড়তে স্বচ্ছন্দ বোধ করি।
প্রশ্ন
আপনি বারবার পড়েন, এমন কবির নাম জানতে চাই।
মাহফুজুর রহমান লিংকন
মাহফুজুর রহমান লিংকন।
প্রশ্ন
বর্তমান সময়ের কবিতার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতা ও দুর্বোধ্যতার অভিযোগ বিষয়ে
কিছু বলেন। কবি কি পাঠকের রুচির সাথে আপোষ করে কবিতা লেখা উচিত?
মাহফুজুর রহমান লিংকন
খুব মজার একটা বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করার জন্য ধন্যবাদ। একটু বলে রাখি- আমি এ সম্পর্কে লিটলম্যাগ বিন্দুতে প্রবন্ধ লিখেছি
(সেটা পড়ার নিমন্ত্রন রইলো)। খুব সহজ ভাষায় একটু বলি- কবিতায় দূর্বোধ্যতা
বলতে কিছু নেই, বরং পাঠকের পঠন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে তাঁর বুঝে উঠা
কিংবা না উঠার ব্যাপারটা! চলমান সময়ে অনেকে কবিতায় ভাষা নিয়ে কাজ করছে,
অনেকে আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ করে কবিতাকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজাবার চেষ্টা
করছে। এখন কথা হচ্ছে- পাঠক যদি কবিতায় সেই অন্তমিল অথবা তথাকথিত ভদ্রলোকের
ভাষাই খোঁজে, সে দায় মোটেই কবির উপর বর্তায় না।
একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, কবির আধুনিক চিন্তা-চেতনা অনেক উন্নত ও
ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণ হওয়ায় কবিতাও অনেক কাব্যিক হয়ে পড়েছে। এতে করে কবি যে
শুধু পাঠককে অতিক্রম করেছে তা নয় বরং সাধারণ পাঠক ‘ভাব-শিষ্য’ পর্যায়ে তো
মনোনিবেশ করছেই না; তারা যে পাশ্চাত্যের প্রতিযোগিতামূলক সমাজ ব্যবস্থার
‘আঁচে’ আধুনিক জীবন-যাপনের দৌড়ে কবিতা পাঠের মতো মানসিক প্রস্তুতি ও
মনোনিবেশমূলক সময় ‘সংকটে’ ভুগছে, সে সত্যটি এড়িয়ে যান। স্বার্থের চাপে
সাধারণ মানুষের মনোযোগ এখন সৃজনশীলতার পরিবর্তে অর্থ ও প্রতিপত্তির দিকে।
যার অবক্ষয়ের দায় এখন প্রতি পদে। ফলে মানুষ যান্ত্রিক হয়ে পড়েছে।
শিল্প-সংস্কৃতির সাথে মানুষের দূরত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। কবিতা পাঠ তাদের
কাছে ‘অর্থহীন’ ও ‘উদ্ভট’ মনে হবে সেটিই স্বাভাবিক।
হ্যাঁ! একটা কথা থেকে যায়, এখানে কবির দায়বদ্ধতাও কম নয়! কবিতার
প্রতিপাদ্যের শর্ত সব সময় কবির নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সংযোগ রক্ষার এবং
সেটিই কবিকে স্বাতন্ত্র্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে। কিন্তু সেটি কোনোভাবেই
চিত্রকল্পের বাইরে নয়। এক্ষেত্রে কবির ব্যক্তিজীবনের সৌকর্যকে তিনি যদি
সর্বজনীনে নিয়ে যেতে পারেন তাহলে সেটি পাঠককে নাড়া দিতে পারবেন। কিন্তু এ
ক্ষেত্রে কবি যদি ব্যক্তিজীবন ‘যাপনের’ উৎপ্রেক্ষাকে শুধুমাত্র ব্যক্তি
কেন্দ্রীকতায় ভাস্বিক করে তোলেন সেটি কোনো পাঠকের কাছে আবেদন সৃষ্টি তো
করবেই না বরং এ ধরনের কবিতা পাঠককে বিরক্ত ও বিব্রত করতে পারে। কবিতাকে সব
সময় উৎকৃষ্ট কাব্যিক সৌকর্যে নির্মাণ করতে হবে। আবার কবিকে সব সময় সতর্ক
থাকতে হবে নন্দন বাক্যের ছলে কবিতা যেন অশালীন হয়ে না পড়ে। কারণ হৃদয়
ক্ষরিত কবি জানেন, সৌন্দর্য ভোগ করা তার যতোটা কাম্য তার চেয়ে সেটি রক্ষা
করা জরুরি।
নাহ! পাঠকের রুচির সাথে আপোষ শব্দটির সাথে আমি ব্যক্তিগতভাবে একমত না!
প্রশ্ন
আপনি কি এক বসায় কবিতা লেখেন, না কি বারবার সংশোধন করেন?
মাহফুজুর রহমান লিংকন
এটা আসলে বলা মুশকিল, কারণ অনেক কবিতার প্লট তৈরি করতেই বছর পার হয়ে
গ্যাছে, আবার অনেক লেখা আপনার ভাষায় ‘এক বসায়’ হয়ে গ্যাছে… এখানে একটা কথা
স্বীকার করতেই হবে এই ‘এক বসায়’ লেখা কবিতার সংখ্যা অত্যন্ত কম।
প্রশ্ন
আপনার প্রেমের কবিতাগুলো কি কল্পনাসৃষ্ট না কি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ?
মাহফুজুর রহমান লিংকন
কবির কোনও কল্পনা শক্তি নেই...
প্রশ্ন
লিংকন ভাই, অনেক ভালো থাকুন সবসময়।
মাহফুজুর রহমান লিংকন
তোমার জন্যও শুভকামনা। ভালো থেকো।
0 মন্তব্য(গুলি):