প্রকৃতি আসলে মানব সন্তানকে তার মত করে পরিচালিত করে নাকি মানব সন্তান
সময়ের সাথে; পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে চলতে শেখে- এই দ্বন্দ্ব চিরকালের। আমার
ছেলে! আহা! আমার ছেলে, বলতেই মনটা এক ধরনের তৃপ্তিতে ভোগে! আজ তার জন্মদিন ! বয়স ৭
বছর পূর্ণ হল! আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা আমি বিভিন্ন উৎসব, আনন্দের তারিখগুলো মনে
রাখতে পারি না। হয় কেউ স্মরণ করিয়ে দেয়, নতুবা মোবাইলে “সেফ” করা থাকে, মোবাইল
জানিয়ে দেয় (ধন্যবাদ প্রযুক্তিকে! লজ্জার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য)। গত কয়েকদিন
থেকে এবার জোরে-স্বরে জানান দেয়া হচ্ছে, জন্মদিন উৎসব পালন করতে হবে। আমি বরাবরের
মত নিরব। অভাব-অনটন সাথে নানাবিধ ঝামেলা আমাকে জাপটে
ধরেই থাকে, কাজেই আমি কিছু বোলতে পারি না। কিন্তু আমার ছেলেটাকে সেটা বোঝাতে হয়
না। ক্যামন করে জানি বুঝে যায়! আমি এই বয়সের শিশুদের এত ধর্য্য খুব কম দেখেছি। ওর
মা’য়ের চরম অসুস্থততার সময় আরও ছোট্ট ছিল, কিন্তু লক্ষ্য করেছি কি অসীম ধর্য্য
নিয়ে ছেলেটা ওই বয়সে নিজের কাজগুলো নিজে করে নিত! আমি রাতে ঘুমনোর সময় কতদিন যে
কেঁদেছি, আর বার বার ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছি সেটা মনে হতেই নিজেকে
সামলাতে পারি না! পাথরের মানুষ, এই আমি কেঁদে উঠি !
আগে কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলতো –“আমার বাবা চাকুরি করে”। এখন জিজ্ঞাসা করলে বলে- “আমার
বাবা কবিতা লেখে”! তার অর্থ এই দাঁড়ালো যে, আমার অতি আদরের ছেলেটিও বুঝে গ্যাছে
তার বাবাকে!
শুধু আমিই নিজেকে চিনতে পারলাম না!
বাবা, অনেক ভালো থাকো! যেমন আছো, তেমনিই থাকো! অসীম প্রাপ্তির থেকে
ছোট ছোট প্রাপ্তি অনেক আনন্দের, মনে রেখো! তোমার দাদা আমাকে প্রায়ই বলতেন – “আধুনিক প্রযুক্তির সবচেয়ে ধ্বংসাত্বক হাতিয়ার কে হার মানাতে
প্রকৃতির ছোট্ট হাতিয়ার ভালোবাসা”। আমার বাবার মত তোমাকেও বলি- “মানুষের ভালোবাসার
পদতলে নিজেকে সমর্পিত করিও, মানুষের জন্য, শুধু মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে
দ্বিধা করিও না”! তোমার মা’কে যেমন বার বার বলি- “আমার ছেলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার
কিংবা সরকারি বড় বাবুই হতে হবে, এসব আমি ভাবি না। শুধু ভাবি আমার ছেলে পড়ুয়া হবে,
জ্ঞানী হবে, তাতেই চলবে”। তোমাকেও বলি- “পড়ুয়া হও বাবা, জ্ঞানী হও। সরকারি বড় বাবু
হয়ে লাভ নাই, যদি পশুসুল্ভ আচরন তোমার ভিতরে থাকে। একমাত্র মানুষই এমন একটি প্রাণী, যে পশু
হয়ে জন্মায় কিন্তু দীর্ঘ চর্চার ভিতর দিয়ে মানুষ হয়ে উঠে। চর্চা চালিয়ে যাও, মানুষ হয়ে উঠো ”।
“শুভ জন্মদিন বাবা ”
“শুভ জন্মদিন”! ১১ অক্টোবর, ২০১৭
ঢাকা।
0 মন্তব্য(গুলি):